কাকাবাবু হেরে গেলেন?

কাকাবাবু হেরে গেলেন? ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছোটোদের জন্য তৈরি বাংলা ছবি এবং ছবিটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র অবলম্বনে কাকাবাবু সিরিজের দ্বিতীয় ছায়াছবি তপন সিন্‌হার সবুজ দ্বীপের রাজা’র পরে। ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেণ্ট কর্পোরেশনের প্রযোজনায় পিনাকী চৌধুরির পরিচালনায় এই ছবিতেই প্রথম কাকাবাবু চরিত্রে অভিনয় করেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, যিনি এই ছবির জন্য বি.এফ্.যে.এ পুরস্কার পান এবং সব চেয়ে বেশীবার এই চরিত্রে অভিনয় করেন অন্যান্য কাকাবাবুর চরিত্রাভিনেতাদের চেয়ে।

kakababu_herey_gelen.jpg

সারমর্ম

কাকাবাবুর পাড়ার ছেলে বিমান যে কাকাবাবুর সাথে বেশ কিছু অভিযানেও অংশ নিয়েছিল এবং রায়চৌধুরি পরিবারের খুবই প্রিয়পাত্র একদিন কাকাবাবুর কাছে এসে তাঁদের মামারবাড়ির আদি বাড়িতে কয়েকদিনের আউটিং-এর প্রস্তাব দেয়। বিমান এবং তাঁর তিন ভাই অত বড় পুরোনো বাড়ি সংরক্ষণ করতে না পেরে তা ভেঙ্গে ফেলে নতুন বাড়ি করবার পরিকল্পনা করে। সেই বাড়ি ভাঙ্গার আগে বিমান চায় যে তাঁরা কয়েকজন মিলে একবার সেখানে ঘুরে আসে, কারণ বাড়িটি অত্যন্ত পুরোনো এবং স্বাভাবিকভাবেই খুবই আকর্ষণীয় বিশেষতঃ কাকাবাবুর মত মানুষদের কাছে। কাকাবাবু স্বভাবতঃই উৎসাহিত হয়ে যেতে রাজি হন। পরের দিনই বিমান, বিমানের স্ত্রী দীপা, কাকাবাবু এবং অসিত ধর — বিমানের পরিচিত আরেকজন ভদ্রলোক যিনি পুরোনো জিনিষ সংগ্রহ করেন, বিমানদের সাথে যাচ্ছেন যদি পুরোনো কিছু আসবাবপত্র পছন্দ হয়। সেই পুরোনো বাড়িতে থাকাকালীনই কাকাবাবুরা বিমানদের মুখে শোনেন তাদের পুর্বপুরুষদের কাহিনী। আর একইসাথে আবির্ভাব হয় নতুন রহস্যের।

কলা-কুশলী

  • কাকাবাবু — সব্যসাচী চক্রবর্তী
  • সন্ত — অর্ঘ্য চক্রবর্তী
  • অসিত ধর — সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
  • বিমান — কুশল চক্রব্বর্তী
  • দীপা — দোলন রায়
  • পাগলা দাদু — সুনীল মুখোপাধ্যায়
  • ডাক্তারবাবু — পার্থসারথি দেব

মুক্তি ও সাফল্য

ছবিটি প্রযোজনা করেন ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপ্‌মেণ্ট কর্পোরেশন এবং পরিবেশনা করেন দূরদর্শন। পরিচালক পিনাকী চৌধুরি আসেন পরিচালক হিসেবে। তবে কাকাবাবুর চরিত্রে শমিত ভঞ্জর পরিবর্তে নির্বাচন করা হয় সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। ভঞ্জ তখন অভিনয় থেকে অবসর নিয়েছেন। সেই সময় সব্যসাচী টেলিভিশনে বিশাল জনপ্রিয় এবং বড় পর্দায়ও শ্বেত-পাথরের থালা বা সন্ধ্যাতারা’র মত কয়েকটি ভীষণ জনপ্রিয় ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও রুদ্র সেনের মত গোয়েন্দা চরিত্রেও সফল। স্বাভাবিকভাবেই চরিত্রটি তাঁর কাছেই যায়। প্রসঙ্গতঃ এই ছবি থেকেই পরিচালক পিনাকী চৌধুরির সাথে সব্যসাচী চক্রবর্তীর জুটি তৈরি হয়, যার ফলে একমাত্র ‘দুর্গা’ বাদে চৌধুরির সব কটি ছবিতেই সব্যসাচী মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। চৌধুরির আরেক পছন্দের অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও এই ছবিতে মূখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন যার সাথে চৌধুরি নিজের সব কটি ছবি করেন কেবলমাত্র পরবর্তী কাকাবাবুর ছবিটি বাদ দিয়ে।

১৯৯৫ সালে ছবিটির শুটিং আরম্ভ হয় এবং মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে. ছবিটি একই দিনে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে এবং টেলিভিশনে মুক্তি পায়। এই ঘটনা বাংলা ছবিতে আর ঘটেনি। ছবিটি আশাতীত ব্যাবসায়িক সাফল্য লাভ করে এবং সেই বছরের অন্যতম সফল ছবির মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য হয়।
সব্যসাচী চক্রবর্তী এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য “বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা” হিসেবে বি.এফ্‌.জে.এ পুরস্কার পান।
এই ছবির সাফল্যে আর দুটি সিকোয়েল হয়। এর পরে কলকাতা দূরদর্শন ছোটপর্দার জন্য ১৩ পর্বের মিনিসিরিজ করেন কাকাবাবুকে নিয়ে এবং প্রথম কাকাবাবু ছবির প্রযোজক চিল্‌ড্রেন ফিল্ম সোসাইটি আবার কাকাবাবুর ছবি প্রযোজনা করেন পিনাকি চৌধুরির সাথে।

Unless otherwise stated, the content of this page is licensed under Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 License